আকিকা দেওয়ার নিয়ম || মেয়েদের আকিকা দেওয়ার নিয়ম জেনে নিন

আসসালামু আলাইকুম, প্রিয় পাঠক, আকিকা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত, যা নবজাতকের কল্যাণ কামনায় পালন করা হয়। এটি সন্তানের জন্য আল্লাহর রহমত লাভের একটি উপায় এবং বিপদ-আপদ থেকে রক্ষার মাধ্যম। ইসলামী বিধান অনুযায়ী, মেয়ে সন্তানের আকিকার জন্য একটি পশু এবং ছেলে সন্তানের জন্য দুটি পশু কোরবানি করা সুন্নত।

সাধারণত, সন্তান জন্মের সপ্তম দিনে আকিকা করা উত্তম, তবে কোনো কারণে সেদিন সম্ভব না হলে ১৪তম বা ২১তম দিনেও করা যেতে পারে। আকিকার পশু অবশ্যই হালাল ও ত্রুটিমুক্ত হতে হবে এবং কুরবানির পশুর মতো উপযুক্ত হতে হবে। আকিকার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন, সন্তানের সুরক্ষা এবং সমাজের দারিদ্র্য দূরীকরণে ভূমিকা রাখা সম্ভব।
আকিকা দেওয়ার নিয়ম || মেয়েদের আকিকা দেওয়ার নিয়ম জেনে নিন

আজকে আমরা এই পোষ্টের মাধ্যমে মেয়েদের আকিকা দেওয়ার নিয়ম 2025 সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো। কেননা মেয়েদের আকিকা দেওয়ার নিয়ম 2025 সম্পর্কে জেনে রাখা আপনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আকিকা কাকে বলে?

আকিকা শব্দটি আরবি "عقيقة" থেকে এসেছে, যার অর্থ হলো কেটে ফেলা বা ভেঙে ফেলা। ইসলামী পরিভাষায়, সন্তান জন্মের পর তার কল্যাণ কামনায় আল্লাহর নামে পশু জবাই করাকে আকিকা বলা হয়। এটি সুন্নাত এবং এই আমলের মাধ্যমে আল্লাহর রহমত লাভ করা যায়। আকিকা সন্তানের সুরক্ষা, সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত।

আকিকা করার সময়

ইসলামে নবজাতকের আকিকা করার উত্তম সময় হলো জন্মের সপ্তম দিন। যদি সপ্তম দিনে আকিকা করা সম্ভব না হয়, তবে ১৪তম দিনে অথবা ২১তম দিনে করা উত্তম। হাদিস অনুযায়ী, সাত দিনের মধ্যে আকিকা করা অধিক ফজিলতপূর্ণ।
হাদিস:
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,

"প্রত্যেক শিশু তার আকিকার বিনিময়ে বন্ধক স্বরূপ। কাজেই সপ্তম দিনে তার পক্ষ থেকে জবাই করবে, মাথা মুণ্ডন করবে এবং নাম রাখবে।" (সুনানে আবু দাউদ, ২/৩৯২)

যদি কোনো কারণে নির্দিষ্ট দিনে আকিকা করা সম্ভব না হয়, তাহলে পরবর্তী সুবিধাজনক সময়ে আকিকা করা যায়। তবে যত দ্রুত সম্ভব এই সুন্নাত পালন করাই উত্তম। যদি পিতা-মাতা আকিকা না দেন, তাহলে ব্যক্তি নিজেও বড় হয়ে নিজের আকিকা করতে পারেন।

মেয়েদের আকিকার নিয়ম

ইসলামিক বিধান অনুযায়ী, ছেলে সন্তানের জন্য দুটি এবং মেয়ে সন্তানের জন্য একটি পশু জবাই করা সুন্নাত। পশু অবশ্যই হালাল হতে হবে এবং ত্রুটিমুক্ত হতে হবে। আকিকার জন্য কুরবানির পশুর মতোই সুস্থ পশু ব্যবহার করতে হয়।
হাদিস:
হযরত আয়েশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) বলেছেন,

"রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন যে, ছেলে সন্তানের জন্য দুটি এবং মেয়ে সন্তানের জন্য একটি ছাগল দিয়ে আকিকা করতে হবে।" (তিরমিজি, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা- ১৮৩)

আকিকার পশুর ধরন

আকিকা করার জন্য হালাল ও সুস্থ গৃহপালিত পশু ব্যবহার করতে হবে। সাধারণত নিম্নলিখিত পশু দ্বারা আকিকা করা যায়:গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ , উট। একটি গরু বা উট সাতজনের আকিকার জন্য ভাগ করা যেতে পারে, যেমন: কুরবানির নিয়মে হয়ে থাকে। তবে ছাগল বা ভেড়া এক ব্যক্তির আকিকার জন্য নির্ধারিত হবে।

আকিকার মাংস বণ্টনের নিয়ম

আকিকার মাংস তিন ভাগে ভাগ করে বিতরণ করা উত্তম:

এক অংশ আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে বিতরণ করা। এক অংশ দরিদ্রদের মধ্যে দান করা। এক অংশ নিজের পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের জন্য রাখা। আকিকার মাংস পুরোটা দান করাও যায়, আবার পুরোটা নিজেরা খেতে পারাও বৈধ। অনেকেই ভুল ধারণা করেন যে আকিকার মাংস পিতামাতা ও দাদা-দাদী খেতে পারবেন না, তবে এটি সম্পূর্ণ ভুল। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন যে, আকিকার গোশত খাওয়া এবং বিতরণ করা উভয়ই বৈধ।

আকিকার অন্যান্য সুন্নাত

শিশুর মাথা মুণ্ডন করা: আকিকার দিনে নবজাতকের মাথা মুণ্ডন করা উত্তম।
ইসলামিক নাম রাখা: আকিকার দিনে শিশুর জন্য একটি অর্থবহ ও সুন্দর ইসলামিক নাম রাখা উত্তম। নামের ক্ষেত্রে: সাহাবাদের নাম বা কুরআন-হাদিস থেকে সুন্দর নাম নির্বাচন করা উত্তম।

শেষ কথা

আকিকা করা একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত যা সন্তানের জন্য কল্যাণ বয়ে আনে। এটি শুধু ইসলামি রীতি নয়, বরং শিশুর সুস্থতা ও মঙ্গলের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। তাই যথাসময়ে আকিকা করা উচিত এবং সুন্নাত মোতাবেক নাম রাখা ও মাংস বিতরণ করা উচিত। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিকভাবে আকিকা সম্পন্ন করার তাওফিক দান করুন, আমিন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url